Tuesday, June 2, 2020

ভালোবাসা আসলে কি ?



ভালোবাসা আসলে কি ?


ভালোবাসা আসলে কি ? সত্যিই কি এর কোন অস্তিত্ব আছে, নাকি মানুষ অযথাই কথা বলে।ভালোবাসা বলে পৃথিবীতে কিছু একটা হয়তো থাকতে পারে।চলুন দেখা যাক সত্যিই তা আছে কিনা।


আমরা যাকে ভালোবাসো বলি তা আসলে কি? তা হলো মানুষের মনে জমে থাকা অতি আবেগ যাকে ইংরেজিতে বলা হয় over emotion. এই over emotion টা হল সেই ভালোবাসা, যা মানুষের মাঝে তরুণ বয়সের জন্মায় একটি ছেলে অথবা মেয়ের প্রতি।এখন আপনারা বলতে পারেন তাহলে ভালোবাসা বলতে কি কিছুই নেই? উত্তর আমি বলবো, না নেই।কিন্তু আবার বলব, হ্যাঁ আছে।এখন আপনি বলতে পারেন ছেলেটা পাগল।যে যাই বলুক, আমার কিছু আসে যায়না। ভালবাসার মানেটা আমি পরে বলব।চলুন আমরা জেনে নেই এর প্রভাব টা আসলে কি। আমি আমার জীবনের ছোট্ট একটা গল্প আপনাদের বলব, যা শোনার পর আপনি হয়তো ভাববেন ছেলেটা অনেক খারাপ।বললে বলতে পারেন, আমার কিছু আসে যায় না। কারণ খারাপ কে মানুষ খারাপ বলবেই আর নিজের দোষ স্বীকার করাটাও অপরাধের কিছু নয়।গল্পটা আপনার জীবনে যদি কোন উপকার আনতে পারে সেটাই আমার সার্থকতাতাহলে চলুন শুরু করা যাক


বয়স যখন ১৫কি ১৬ প্রথম কেউ একজন আমাকে প্রপোজ করলঅতি আবেগে পড়ে গেলাম, ভয়ও হচ্ছিল কিন্তু আবার মাথায় এটাও কাজ করছিল যে মানুষ তো প্রথম প্রেমের ব্যাপারে অনেক কিছুই বলে।প্রথম প্রেম নাকি হারাতে হয় না, জীবনে একজনকেই ভালবাসতে হয়।প্রথম প্রেমই জীবনের সব। যাকে একবার ভালোবাসবে তাকে পাওয়ার জন্য সবকিছু করতে হয়। এইরকম অনেক কিছুই মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছিল। যাইহোক নিজের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না পেরে মেয়েটাকে একসেপ্ট করে নিলাম। তারপর এভাবেই হেসে খেলে পার হয়ে গেল অনেকদিন। তারপর হঠাৎ একদিন রং নাম্বারে একটি কল আসলো আমার ফোনে, তাও আবার কল দিয়েছে একটি মেয়ে। পরিচয় জানতে চাইলাম। কিন্তু দিচ্ছিল না। এভাবেই অনেকদিন আমাকে বিরক্ত করল। তারপর আমি নিজে থেকেই তাকে চিনতে পারলাম। কিন্তু তাকে বলার পরও সে অস্বীকার করছিল। কিন্তু একটা সময় সে স্বীকার করল। সে আমার রিলেটিভ ছিল। আমাকে প্রতিদিন রাতে কল দিত, কিন্তু আমি ব্যাপারটা বুঝতে পারিনি। ফ্রেন্ডলি তার সাথে কথা বলতাম। এর মাঝে সে আমার দয়িত এর নাম্বার চাইলো ‘তাকে দিলাম’ কিন্তু কিন্তু সে যে তাকে থ্রেড করার জন্য নাম্বার নিয়েছিল তা কে জানতো। যাইহোক তার এসব কর্মকাণ্ডের জন্য আমাদের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে গেল। তারপর কানে ধরে বলেছিলাম আর কখনো রিলেশন করব না। কিন্তু তার মাঝে থ্রেডদাতা আমাকে প্রপোজাল দিলেন। কেন জানি তাকে ফিরিয়ে দিতে পারলাম না। তার মিষ্টি মিষ্টি কথা গুলো দিয়ে আমাকে ইমপ্রেস করে ফেলল। শুরু হলো আরেকটি নতুন সম্পর্ক, তবে মেয়েটা খুব চালাক আর বুদ্ধিমতি ছিল। কিভাবে ছেলে পটাতে হয় তা খুব ভালো করে জানতো। যাইহোক ফোনে কথা বলতে বলতে রিলেশনে অনেক দূর এগোল। মেয়েটা অনেক ভালো কথা বলতে পারতো। এমন কিছু কথা জানতে চাও মানুষকে ধাক্কা দেয় এবং তার প্রতি আকৃষ্ট করে তার মধ্যে কিছু কথা হলো-তোরা ছেলেরা তো এমনেই দুইদিনেই মেয়ের দুইদিন ওই মেয়ের সাথে-তুই তো আমাকে ভুলে যাবি তুই কি আমাকে সত্যি ভালোবাসিস? আমার চেয়ে ভালো মেয়ে পেলে তুই তার কাছে চলে যাবি। ধরনের আরো অনেক কথাবার্তা বলল, যা আমাকে তার প্রতি খুব আকৃষ্ট করে তুলল। একসময় আমি ভাবতে শুরু করলাম সে-ই আমার জীবন তাকে ছাড়া আমার বাঁচা সম্ভব নয়। তারপর কোন এক কারণে ফ্যামিলিতে জানাজানি হয়। জিজ্ঞেস করার পর আমি সব স্বীকার করে ফেললাম কিন্তু সে অস্বীকার করল। সে আমাকে কনফিউজড করা শুরু করল। সে তার ফ্যামিলিকে এক কথা বলে, আমার ফ্যামিলিকে এক কথা বলে, আমাকে আরেক কথা বলে। সবকিছু মিলে খুব ডিপ্রেশনে ভুগতে থাকি। কিন্তু আমার মাথায় ভূত চেপেছিল, আমার তাকে পেতেই হবে, তাকে ছাড়া আমার চলবে না। তার জন্য আমি পাগল হয়ে যাই, কিন্তু তাকে আমি কখনো সামনে থেকে দেখিনি। তারপর পাগলামি করে বাসায় ভাঙচুর মারামারি-কাটাকাটি অনেক কিছুই করি তাকে পাওয়ার জন্য। কিন্তু কোন কাজ হচ্ছিল না। তাই ডিসিশন নিলাম আত্মহত্যা করব। করতে গেলাম আত্মহত্যা, তারপর মাথায় কাজ করলো তোতা মহাপাপ। বরং আমি তাকে নিয়ে পালিয়ে যাই।


 পালাতে গিয়ে সে ধরা পড়লো। তিন বছর আগে থেকেই তার বিয়ে ঠিক হয়েছিল অন্য একটি ছেলের সাথে। কিন্তু সে এসেছিল আমাকে নিয়ে মজা করতে, আমার মনের সাথে খেলা করতে। ঘর থেকে বেরিয়ে আমি তাকে আনতে গেলাম। কিন্তু তাকে আনতে পারলাম না কারণ এর মধ্যেই তাকে বিয়ে দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু এখানে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো এই পুরো কাহিনীটাই ফোনে ছিল। কিন্তু তারপরও কমেনি আমার পাগলামি। তারপর ৬ মাস পাগলা গারদে ছিলাম। সেখানে বসে আমি নিজেকে চিনতে পারলাম। তখন বুঝলাম, আমি মানুষ না পশু হয়ে গিয়েছি বাবা-মা-ভাই-বোন সবাইকে অস্বীকার করতে লাগলাম। মাকেও মা ডাকা বন্ধ করে দিয়েছিলাম। কিন্তু মা তো জন্ম দিয়েছে সে তো ছেলেকে ফেলে দিতে পারে না, তাই না? কিন্তু আমি বাবাকে বাবা মাকে মা বলে স্বীকার করিনি, এমনকি তাদেরকে মারার হুমকি দিতে দ্বিধাবোধ করেনি। হিংস্র প্রাণীর মত হয়ে গিয়েছিল আমার মানসিকতা। আমি বলবো আমার চিন্তা ভাবনা অনেক সুন্দর ছিল। কিন্তু কখন কিভাবে এতটা নিচে নেমেছিল তা আমি নিজেও বুঝতে পারিনি। আম্মু হার্ট ফেল করেছিল তারপরও তার দিকে একটি বারের জন্যও ঘুরে তাকাইনি। কতটা পাষাণ হয়ে গিয়েছিলাম আমি। কিন্তু তারপরও মা আমাকে তার কোলে টেনে নিয়েছে। ৬ মাস বন্দি থাকার পর বুঝতে পারলাম আমার বাবা-মা আমাকে কতটা ভালোবাসে। বাবা-মাকে জীবনে কষ্ট দিয়েছে। কিন্তু কখনো ভাবিনি তারা আমাকে পৃথিবীর সব থেকে বেশি ভালোবাসে। এই পাগলা গারদের পাগল গুলোই আমাকে শিখিয়েছে বাবা-মার কি জিনিস। সৃষ্টিকর্তার কাছে অনেক শুকরিয়া আদায় করে যে তিনি আমাকে অনেক জঘন্য বিপদ থেকে রক্ষা করেছেন এবং আমার বাবা-মার কষ্টটা বোঝার তৌফিক দিয়েছেন। 


এবার আসা যাক মূল কথায়, ভালোবাসা আছে কি নাই সেটা হয়তো এতক্ষণে কিছুটা ধারণা করতে পেরেছেনহুম! একটা ভালোবাসা আছে সেটা হল বাবা মায়ের ভালোবাসা, স্ত্রীর প্রতি স্বামীর ভালোবাসা এগুলো এক ধরনের ভালোবাসাএখন আপনারা বলবেন তাহলে আমারটা কি? আমারটা ছিল তরুণ কালের ভালোবাসা, যেটাকে বলা হয় অ্যাট্রাকশন,এটা কোন ভালোবাসা নয়এবার আমরা জানতে চেষ্টা করবো ভালোবাসার সংজ্ঞাটা তাহলে কী। কিন্তু তার আগে একটা কথা বলবকখনোই নিজের মূল্যবান সময়টা নষ্ট করে কারো সঙ্গে প্রেম বা কোন অবৈধ রিলেশনে যাবে নাএটা তোমাকে হিংস্র করে তুলবে, নষ্ট করে দিবে তোমার সুন্দর মন এবং মানসিকতা বাবা-মাকে ভালবাসতে শিখো তাদের আশা পূরণ করতে শিখো। তাতেই তোমার মঙ্গলচলুন এবার সংজ্ঞাটা দেই

ভালোবাসা হলো সুস্থ মানুষের অসুস্থ মানসিকতার আরেক নাম

Written by Ariyan Htidoy

Post a Comment

Whatsapp Button works on Mobile Device only

Start typing and press Enter to search